ডিভোর্সের পর দ্বিতীয় বিয়ে, অনেক আশা ও স্বপ্নের মাধ্যমে মানুষ বিয়ের পর নতুন জীবনের পথ চলতে শুরু করে। কিন্তু জীবনে বাঁধা বিপত্তির ফলে অনেক সংসার রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে মানুষ ডিভোর্সের দিকে বেশি ধাবিত হচ্ছে হচ্ছে। বর্তমানে দেশের ডিভোর্সের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় ডিভোর্সের তিন মাস পরে নতুন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। এছাড়াও ডিভোর্সের কতদিন পর দ্বিতীয় বিয়ে করবেন একজন উকিলের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডিভোর্সের পর দ্বিতীয় বিয়ে করা যায়:
বর্তমানে পারিবারিক কলহ ও বিভিন্ন কারণে ডিভোর্সের সংখ্যা অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আইন অনুযায়ী ডিভোর্সের তিন মাস পরে মেয়েরা নতুন বিবাহ করতে পারবে। পুরুষের ক্ষেত্রে বলা হয় যে ডিভোর্স কার্যকর হওয়ার পর পুরুষ নতুন বিবাহ করতে পারবে। “ডিভোর্সের পর দ্বিতীয় বিয়ে” মেয়ে যদি তিন মাস হওয়ার পূর্বে নতুন বিবাহ করে তবে তার বিরুদ্ধে চাইলে পুরুষ মামলা দিতে পারবে। অন্যদিকে যদি পুরুষ ডিভোর্স কার্যকর হওয়ার পূর্বে নতুন বিবাহ করতে চায় তবে স্ত্রী এর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া নতুন বিয়ে করলে তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা দিতে পারবে।
তিন তালাকের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিধান:
রাগ অথবা অজ্ঞতার কারণে সমাজে প্রায়ই দেখা যায় দিকে তিন তালাক দিয়ে থাকে। তিন তালাকের পর যদি স্বামী ও স্ত্রী একত্রে থাকতে চায় তাহলে আবার তাদের বিয়ে করতে হবে। সমাজে নানা স্থানে হিল্লা বিয়ে নামক একটি কথা চালু আছে। ইসলামে অনেকেই হিল্লা বিয়েকে সমর্থন করে না। তবে তারা যদি একত্রে থাকতে চায় আইন অনুযায়ী তাদেরকে আবার বিয়ে করতে হবে। ডিভোর্সের পর দ্বিতীয় বিয়ে।
স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম:
বিবাহ আইনে কোন নারী কোন কারণ ছাড়া তালাক প্রদান করতে পারবেন না। স্বামীকে ডিভোর্স দিতে হলে কিছু কারণ থাকতে হবে। যেমন: স্বামী পুরুষত্বহীন হলে, ডিভোর্সের পর দ্বিতীয় বিয়ে, স্বামী কোন কারণ ছাড়া তিন বছর স্ত্রী এর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে, দুই বছর ধরে কুষ্ঠ রোগ অথবা যৌন রোগে আক্রান্ত থাকলে, স্ত্রীর ধর্ম পালনে বাধা প্রদান করলে, স্ত্রীকে মারধর করে স্ত্রীর জীবন দুর্বিষহ করে তুললে, স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকলে ইসলামিক শরীয়ত অনুযায়ী সমান অধিকার না দিলে, স্ত্রীর ধর্ম পালনে বাধা প্রদান করলে, সাত বছর বা তার অধিক সময়ের কারাদণ্ড হলে ও স্বামী খারাপ চরিত্রের মহিলাদের সাথে অন্যতম মেলামেশা করলে। ইত্যাদি এক বা একাধিক কারণে স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়া যাবে আদালতের মাধ্যমে।
ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগে: ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগবে এটা নির্ভর করে আপনার দেনমোহর কত টাকা সেটার উপর। বিয়ের সময় যদি সম্পূর্ণ দেনমোহর পরিশোধ না করেন তাহলে ডিভোর্স দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দেনমোহর আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। ডিভোর্স কার্যকর হতে ৯০ দিন সময়ের প্রয়োজন হয় এই ৯০ দিনের স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে হবে। ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগবে এটা নির্ধারিত নয় তবে তালাক নিবন্ধনের ফি হলো ৫০০ টাকা।
তালাকের নোটিশ পাঠানোর নিয়ম: তালাক দেওয়ার জন্য নোটিশ পাঠানো বাধ্যতামূলক। স্ত্রী যদি তালাক প্রদান করতে চায় তবে স্ত্রী স্বামীকে তালাকের নোটিশ পাঠাবে। আর স্বামী যদি তালাক প্রদান করতে চায় তবে স্বামী স্ত্রীকে তালাকের নোটিশ পাঠাবে। আবার এলাকার চেয়ারম্যান এর মাধ্যমেও তালাক প্রদান করা যায়। এলাকার সকল গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং নারী ও পুরুষের অভিভাবক সহ তালাক কাজটি সম্পন্ন করতে পারে। আবার তালাকের নোটিস নিজে লিখে অথবা যেকোনো কাজী অফিসের মাধ্যমে লিখে পাঠাতে পারে। ডিভোর্সের পর দ্বিতীয় বিয়ে।
দেনমোহর পরিশোধ: স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে হলে অবশ্যই আপনাকে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। যদি ডিভোর্সটি গ্রামের চেয়ারম্যান দ্বারা কার্যকর হয় তাহলে আপনি দেনমোহর চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আপনার স্ত্রী কে দিবেন। আর যদি কোর্টের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাহলে দেনমোহর কোর্ট থেকে প্রদান করা হবে।
ডিভোর্সের পর দ্বিতীয় বিয়ে করা যায় ৯০ দিন পর। ইসলামিক দৃষ্টি থেকে মহিলা যদি গর্ভবতী হন তাহলে বাচ্চা হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে সকল ভরণপোষণ দিতে হবে। এবং বাচ্চা হওয়ার আগে ডিভোর্স প্রদান করতে পারবে না। বাচ্চা হওয়ার পর ডিভোর্স দিতে হবে। এবং তারপরে পুরুষ দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারবে। তবে বিবাহ বিচ্ছেদ না করাটাই ভালো। আমাদের জীবনে চলার পথে অনেক বাঁধা বিপত্তি আসবে। কিন্তু আমাদের সব সময় চেষ্টা করতে হবে বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে সুন্দর সুষ্ঠুভাবে জীবন যাপন করা। আর সরকারের উচিত এর সুষ্ঠু বিচার কার্য সম্পাদন করা।