ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ কে, দেশের নাগরিক হিসেবে জানা খুবই প্রয়োজন। বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষার আন্দোলন, যা আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, তা ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিত। এই আন্দোলন আমাদের জাতীয় চেতনার এক অনন্য উদাহরণ, যা বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়কে তুলে ধরে। ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ কে, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে, আমাদের ইতিহাসের পাতায় ফিরে যেতে হবে। আজকে আমরা ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ কে এই নিয়ে আলোচনা করব।
ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ কে
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি, ঢাকার রাজপথে ঘটেছিল সেই মর্মান্তিক ঘটনা। পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষার পরিবর্তে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাঙালি ছাত্রসমাজ ও সাধারণ জনগণ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমবেত হয়ে মিছিল করে রাজপথে নেমে আসে। তখনই পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান রফিক, জব্বার, শফিউল, বরকতসহ আরও অনেক। তবে প্রশ্নটি ওঠে, ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ কে?
ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য বা রেকর্ড পাওয়া না গেলেও, সাধারণভাবে মনে করা হয় যে ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ হচ্ছেন রফিক উদ্দিন। তিনি ২১শে ফেব্রুয়ারি গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। যদিও সেই দিন আরও কয়েকজন শহীদ হন, তবে রফিক উদ্দীনের নামই প্রথম শহীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তার রক্তে রঞ্জিত হয়েছে ঢাকার রাজপথ, আর সেই রক্তই আমাদের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইকে আরও জোরদার করেছে।
ভাষা আন্দোলনের ২য় শহীদ কে?
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আরও কঠিন, কারণ ঐদিনের ঘটনায় একাধিক মানুষ শহীদ হন। শফিউল, রফিক, সালাম—এই সকল নামগুলোও ঐ দিনের শহীদদের তালিকায় আছে। তাই ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ কে বা ২য় শহীদ কে, তা নিয়ে অনেক সময় বিতর্ক থাকতে পারে, তবে তাদের ত্যাগের মর্ম যে এক, তা অস্বীকার করা যায় না।
ভাষা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ ভাষা শহীদ কে ছিলেন তা নিয়েও আলোচনা করা হয়। সেদিনের ঘটনায় সবচেয়ে কম বয়সী ভাষা শহীদ ছিলেন ৮ বছর বয়সী একটি শিশু। তবে তার নাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। যদিও অধিকাংশ মানুষ মনে করেন যে বরকত বা রফিকের মতোই তারা ভাষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ মিনারও ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২১শে ফেব্রুয়ারির পরপরই ঢাকার মেডিকেল কলেজের সামনে প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়। এই মিনারটি প্রতীকীভাবে ভাষা শহীদদের স্মরণে স্থাপিত হয়। যদিও পরবর্তীকালে তা ধ্বংস করা হয়, তবুও এই মিনারটি আমাদের স্মৃতিতে অমর হয়ে আছে।
এছাড়াও, ভাষা আন্দোলনের সর্বশেষ শহীদ কে, তা নিয়েও অনেক প্রশ্ন ওঠে। কেউ কেউ মনে করেন যে আন্দোলনের শেষদিকে যারা প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাদেরই সর্বশেষ শহীদ হিসেবে ধরা উচিত। তবে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেতে হলে, আমাদের আরও গভীরে যেতে হবে এবং ইতিহাসের প্রতিটি অংশ খুঁজে দেখতে হবে।
আজ, ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনে আমরা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করি এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। তারা আমাদের মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন, আর সেই ত্যাগের ফলেই আমরা আজ বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারি। তাই, ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ কে, তা নিয়ে যতোই প্রশ্ন উঠুক না কেন, আমাদের হৃদয়ে সবসময়ই এই শহীদরা অমর হয়ে থাকবেন।
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, আমাদের চেতনার অন্যতম উৎস। যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন, তারা আমাদের জাতীয় গৌরব। তাই ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ কে আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন। এবং তাদের এই অবদানের জন্য তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা চিরকাল অটুট থাকবে।