সফর মাসের ফজিলত, হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহরম মাস। আর দ্বিতীয় মাস হল সফর মাস। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা’আলার কাছে মাসের সংখ্যা বারটি। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। সফর আরবি শব্দ। এর অর্থ খালি বা শূন্য। আরবিতে ‘সফরুল মাকান’ বলতে এমন জায়গা বুঝায় যা মানুষ শূন্য।। এজন্য এ মাসের নামকরণ করা হয় সফর। মহরম মাসে যুদ্ধ বন্ধ থাকায় আরবরা এ মাসে দলে দলে যুদ্ধ হয়ে যেত। ফলে তাদের ঘর খালি হয়ে যেত। এজন্য সফর অর্থ খালি বা শূন্য বোঝায়।
সফর মাসের ফজিলত
আমল: মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়। আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার এবাদত করার জন্য। মানুষ ও জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদত বন্দেগি করার জন্য। তাই সবার উচিত আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে নেক আমল করা। আর প্রতি চন্দ্র মাসে নির্দিষ্ট কিছু আমল থাকে। তেমনি সফর মাসেও বেশ কিছু আমল রয়েছে। যেমন ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিজয়ের তিনটি রোজা রাখলে অনেক সোওয়াব পাওয়া যায়।
সফর মাসের ফজিলত
এই তিনটি রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত অত্যন্ত।
প্রতি মাসের তিনটি রোজা পালনের কথা হাদিসে এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতিমাসে তিনটি করে সিয়াম পালন সারা বছরের সিয়াম পালনের সমান। এছাড়া প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার অভ্যাস করা। আমাদের প্রিয় নবী এই দুই দিন বিশেষ রোজা রাখতেন। এই বিষয়ে নবীজী (সাঃ) বলেন-বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহ তা’আলার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়। তাই এই দুইদিন রোজা অবস্থায় থাকা উত্তম। এছাড়া ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল আমল গুলো করার সাথে সাথে দান সদকার প্রতি মনোযোগী হওয়া। নতুন মাসে চাঁদ দেখে দোয়া পাঠ করা।
সফর মাসের ফজিলত
প্রার্থনা কবুল এবং গুনাহ মাফের মাস: সফর মাস গুনাহ মাফ করার মাস হিসেবে পরিচিত। এই মাসে বান্দা তার রবের নিকট বেশি করে দোয়া প্রার্থনা করেন। কারণ এ মাস দোয়া প্রার্থনার মাস। এ মাসের ফজিলত অত্যন্ত বেশি। তাই বান্ধা তার রবের নিকট নিজের সকল গুনাহের কথা প্রকাশ করেন এবং আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সফর মাসের প্রায় সকল দোয়া এবং প্রার্থনা আল্লাহর কাছে বেশি কবুলিয়তা পেতে সাহায্য করে।
সফর মাসে যাত্রা বা পথ প্রদর্শন: সফর মাসে যাত্রা বা পথ প্রদর্শন করার দিনে সালাত পড়া সুন্নত মুয়াকাদা সালাতের মধ্যে গণ্য হয়ে থাকে। সফর মাসে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সাথে নফল সালাত পড়া অনেক ফজিলতপূর্ণ ধর্মীয় কাজ। এ মাসে তারাবি নামাজ পড়ার সুন্নত প্রচলিত ছিল। এ নামাজে কুরআনের সুরা পড়া হয়, যা ভক্তি এবং পবিত্রতার মহান সময়ে কাটানোর জন্য মুমিনদের সাথে একত্ব ও পারস্পরিকভাবে একে অন্যকে দেখতে পাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করতো।
সফর মাসের ফজিলত
ইহতিকার থেকে মুক্তির মাস: কুরআনে উল্লেখ আছে যে, সফর মাস একটি ইহতিকার থেকে মুক্তির মাস। অর্থাৎ এই মাসে মুসলিমদের উত্তরাধিকারী হিসেবে যেকোনো ধর্মীয় ইহতিকার বন্ধ হয়ে যায়।
আল্লাহ তা’আলা যাদের সফল বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, মহাকালের শপথ মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয়, যারা সৎকর্ম করে ,
একে অপরকে সত্যের উপদেশ দেন এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে ধৈর্য ধারণ করেন। তারাই এই ক্ষতি থেকে মুক্তি পাবে। কেননা, মানুষের পার্থিক জীবন যেমন ভাবে অতিবাহিত হোক না কেন, যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করবে এবং তার আসমানী কিতাব অনুযায়ী জীবন যাপন করবেন। তারা চিরস্থায়ী নিয়ামত এবং জান্নাতের চির সুখ লাভ করে ধন্য হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমাদের কর্ম দোষের ফল তোমাদের ভোগ করতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির কল্যাণ ও অকল্যাণের পরোয়ানা কিয়ামতের দিন হিসাব দিতে হবে এবং কর্ম অনুযায়ী ফল ভোগ করতে হবে। আর যারা নেক আমল করবে তারাই হবে সফল ব্যক্তি।
সফর মাসের ফজিলত
কোন সময় বা মাসের সঙ্গে মঙ্গল-অমঙ্গল এর সম্পর্ক নেই: জাহেলি যুগে আরবে সফর মাস ঘিরে নানা কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। এ মাসকে অশুভ মনে করা হতো। অথচ আল্লাহর সৃষ্ট প্রতিটি দিন ও মাস অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ। কোন সময় বা মাসের সঙ্গে মঙ্গল-অমঙ্গল এর সম্পর্ক নেই। ইসলামিক দৃষ্টিতে কল্যাণ ও কল্যাণ নির্ভর করে মানুষের কর্মের উপর।
সফর মাসের ফজিলত
সফর মাস ইসলামিক ক্যালেন্ডার এ একটি মাহের নাম বা আরবি ক্যালেন্ডারে “সফর” নামে পরিচিত। এ মাসের ফজিলীয়ত অত্যন্ত। এ মাসে প্রত্যেক মুসলমান কিছু আমল বা দ্বীনের ক্ষুদ্র অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। এ মাসে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের সকল গুনাহ মাফ করেন। তাই বান্দারা একাকীত্বভাবে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট নিজের সকল গুনাহের কথা প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন।